২০শে মে, ২০২৫ ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

নগর আ’লীগের সম্মেলন ঘিরে বাড়ছে গুঞ্জন, ছড়াচ্ছে গুজব ! নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে ?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনে সম্মেলন ব্যস্ত নেতা কর্মীরা। পদ প্রত্যাশি নেতাদের ব্যস্ততা আরেকটু বেশি। আর তাদের অনুসারিরাও ছুটছেন সমান তালে। এরই মাঝে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। কখনো কখনো ছড়াচ্ছে গুজব। রাতের তথ্য একরকম আবার সকালের তথ্য আরেক রকম। গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে বাতাসের গতিতে। যে যার নিজের মত করে তথ্য প্রচার করছেন। এদিকে, সম্মেলনকে ঘিরে চাপে আছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশিরা। বেশ চাপ এখন তাদের মাথায়। নানান তথ্য ছড়িয়েছে নেতা কর্মীদের মধ্যে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ১ মার্চ। ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে সভাপতি পদে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছেন না অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম বিভক্তি। ইতিমধ্যেই প্রায় একডজন নেতা সাধারণ সম্পাদক হতে মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন। লাগিয়েছেন পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুনও। কেন্দ্রেও জোর তদবির করছেন। নেতা-কর্মীরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে খায়রুজ্জামান লিটনের বাবা জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা মুসলিমলীগের রাজনীতি বিমূখ করে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে নেতাকর্মীদের আনতে পেরেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘদিন রাজশাহীতে নিস্ক্রিয় ছিলো আওয়ামী লীগ। পরে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন পড়াশোনা শেষ করে রাজনীতিতে যুক্ত হলে তার হাত ধরেই রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়ে উঠে। বিএনপি-জামায়াতের উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ। এছাড়া রাজশাহী শহরকে নির্মল বাতাস ও সবুজ নগরী হিসেবে সারাবিশ্বে যেমন পরিচিতি এনে দিয়েছেন, তেমনি উন্নয়নের জোয়ারেও রাজশাহীকে এগিয়ে রেখেছেন। মুজিববর্ষে তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে এনেছেন ৩হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এসব বিবেচনায় লিটনের নেতৃত্ব বঞ্চিত হতে চাননা রাজশাহী আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মীরা লিটনকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধ। তবে রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলার রহমান সভাপতি প্রার্থী হতে চান বলে লোকমুখে গুঞ্জন শোনা গেলেও প্রচারে দেখা যায়নি। ফোন করা হলে তিনি বলেন, প্রার্থী হবার সম্ভাবনা আছে। দায়িত্ব পেলে পালন করবো।তবে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে তৎপর রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ছাড়াও প্রায় একডজন নেতা।এদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তুখোর মেধাবী সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, মোস্তাক হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নওশের আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, রাজশাহী কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ রুবন, সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবু। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে খায়রুজ্জামান লিটনের কোন বিকল্প নেই। তাই কেউ সভাপতি পদে প্রার্থীও হবেন না বলেই বিশ্বাস করি। বিকল্প প্রার্থী হিসেবে যার কথা শোনা যাচ্ছে তিনি গণবিচ্ছিন্ন। নিজের প্রার্থীতা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, এর আগেও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। সংগঠন মনে করলে এবারো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেবো।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, বর্তমান সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কোন বিকল্প নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান টেন্ডারবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক ও রাজাকার পরিবারের কেউ যাতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে না পারেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে পারবে এমন নেতৃত্ব চাই। আমাকে নেতা-কর্মীরা দায়িত্ব দিলে সংগঠনকে সুসংগঠিত করবো। মহানগর আওয়ামী লীগের এবার শক্তিশালী প্রার্থী সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। বিপদে আপদে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকছি। আশা করছি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবে।মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু বলেন, সংগঠনের দুঃসময়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে টিকিয়ে রেখেছি। এখন অনেক নেতা আছেন। তবে আমার মত দুঃসময়ের নেতা কম আছেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করছি। নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ রুবন বলেন, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কাউকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চাইনা। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। আমার বাবা দীর্ঘদিন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে শিবিরের হামলায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। দলীয় সভানেত্রী এবং নেতা-কর্মীরা চাইলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, গতবার সভাপতি পদে লিটন ভাই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়েছেন। আশা করছি এবারো তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। অন্য কেউ সভাপতি পদে আসলে দল আর দল থাকবে না। নিজের স্বার্থটাই উদ্ধার করবে। তাই অন্য কাউকে সভাপতি পদে দেখতে চাইনা। তিনি আরো বলেন, গতবার চারজনের মধ্যে ভোটে সাধারন সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছি। এবারো দলীয় নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই মেনে নেব।সম্মেলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রধান অতিথি থাকবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকবেন। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য নগর আওয়ামী লীগের সবগুলো ইউনিট কাজ করছে।তিনি বলেন, ভোট হলে নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ও গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। তাই অন্যান্য জেলার মত সমঝোতার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচন হবে বলে আশা করছি। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর। ওই সম্মেলনে খায়রুজ্জামান লিটন সভাপতি ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ পেরিয়েছে আরো দুই বছর আগে। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচটি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো নতুনভাবে না হওয়ায় ২০১৪ সালের করা ৩৯৫ জন কাউন্সিলর দিয়েই এবারো মহানগর কমিটির সম্মেলন হবে।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ